শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
সাপ্তাহিক সাহসী সময়ের ২৬তম বর্ষে পদার্পনে সকলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি রাজবাড়ীতে হারানো ৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি কালুখালী উপজেলার হোগলাডাঙ্গী মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তরে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার পথে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলায় ভ্যান উল্টে গভীর গর্তে পড়ে মসলা বিক্রেতা নিহত রাজবাড়ীতে সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ডিজিটাল যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের উদীয়মান ক্ষেত্র ঃ ভার্মা
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গর্ভবতী মায়েদের সচেতনতা

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গর্ভবতী মায়েদের সচেতনতা

 সেলিনা আক্তার  করেনা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে পুরো বিশ্ব। এমন অবস্থায় গর্ভবতী নারীদের ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আক্রান্ত দেশগুলোতে গর্ভবতী নারীদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কিছু দেশ। আমরা সবাই জানি যে এখন আমাদের জীবন স্থবির হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিদিনের জীবনে এই পরিবর্তনের পিছনে একটি নির্দিষ্ট কারণ হিসেবে রয়েছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন এবং অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন-শিশু থেকে বয়ষ্ক এমনকি গর্ভবতী মহিলারা পর্যন্ত।
সালেহা চৌধুরী(৩০) নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তার ডেলিভারী হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি করোনা পজিটিভ হন। এতে তিনি, তার পরিবার এবং তার চিকিৎসকও ঘাবড়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি করোনার চিকিৎসা নেন এবং তা সেরে যাওয়ার পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে সালেহা ও তার পুত্র সন্তান ভালো আছে।
কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা মানুষের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমণে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কোন ফোটা ড্রপলেট বাতাসে ছিটকে বা কাশির সময় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। কেউ যখন কোন সংক্রমিত ব্যক্তি যিনি ইতিবাচকভাবে পরীক্ষিত হয়েছেন, তার ছোঁয়া বা সরাসরি কোন সংক্রমিত ব্যক্তির দ্বারা সংক্রমণটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
সাধারণত গর্ভবতী নারীর করোনা হলে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই লক্ষণ দেখা দেয়। খুব বেশী কিছু পার্থক্য হয় না। ধারণা করা যায়, সন্তান সম্ভাবারাও অন্যদের মতোই মাঝারী ধরণের ঠান্ডা, জ্বর, কাশি ইত্যাদি উপসর্গে ভুগে থাকেন। খুব বেশী খারাপ অবস্থা যেমন-নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয় সাধারণত যারা বয়োঃবৃদ্ধ তাদের। গর্ভবতী মায়ের যদি শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা থেকে থাকে, তবে করোনার প্রভাবে তার অবস্থা মারাত্মক হবার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখতে হবে একজন সন্তানসম্ভাবা মায়ের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একজন সাধারণ নারীর চেয়ে বেশী।
মায়ের করোনা হলে গর্ভের সন্তানের করোনা হবেই কিনা বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন চিকিৎসকরা। তবে এটি বলা যায় যে, সম্ভবত করোনার কারণে মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের সম্ভাবনা নেই। এমনকি ভাইরাসটি গর্ভস্থ সন্তানের দেহে ছড়িয়ে পড়বেই, এমনও না। তবে হ্যাঁ, সন্তান জন্মের সময় যদি মায়ের করোনা হয়ে থাকে তবে নবজাতকেরও করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা করতে হবে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, ‘গর্ভধারণকালে একজন গর্ভবতী মায়ের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো কমে যায়। এ সময় তাদেরকে সাধারণত আয়রন, ফলিক এসিড এবং ক্যালসিয়াম ছাড়া অন্য কোন বড়ি বা ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয় না। যদি তারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন তাহলে তাদেরকে যে সমস্ত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হবে সেগুলো মা ও গর্ভস্থ ভ্রুণের জন্য কতটা নিরাপদ বা তার ফলাফল কী হবে তা এখনো জানা যায়নি। সবকিছু একটা ট্রায়ালের মধ্যে আছে। ফলে করোনাকালে গর্ভধারণ আক্ষরিক অর্থেই ঝুঁকিপূর্ণ।’
এই ঝুঁকির বিষয়গুলো জানতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা গবেষণা করছে। ইউনিসেফের ৭ই মে ২০২০ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীকালীন সময়ের মধ্যে আনুমানিক ২৪ লাখ শিশুর জন্ম হবে এবং বৈশ্বিকভাবেও এর প্রভাবের মধ্যে আনুমানিক ১১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর জন্ম হবে। গত ১১ই মার্চ কোভিড-১৯ মহামারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ৪০ সপ্তাহের মধ্যে এইসব শিশুর জন্ম হওয়ার কথা রয়েছে। এই মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্য সেবা চাপের মুখে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ প্রবাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
ইউনিসেফ আরো বলেছে, ‘প্রসূতি মা ও নবজাতকদের রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্ব জুড়ে লকডাউন ও কারফিউ’র মতো নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ, মহামারী সামলাতে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর হিমশিম অবস্থা ও সরঞ্জামের ঘাটতি এবং ধাত্রীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা কোভিড-১৯ এর সেবাদানে নিয়োজিত হওয়ায় শিশুর জন্মের সময় দক্ষ লোকবলের ঘাটতি থাকবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত নারীর দুই শতাংশই গর্ভবতী। এ কারণে এই সময়ে গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ এ সময়ে গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত চেকআপ করতে না পারাটা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি গর্ভবতী মা করোনায় আক্রান্ত হলে বিপদ আরো বেশী। করোনায় আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে। আবার মৃত সন্তানও প্রসব করতে পারে।
ভাইরাসের ভয়ে অনাগত শিশুটির চিন্তায় গর্ভবতী নারীদের আতঙ্কিত না হলেও চলবে। তবে ঝুঁকির কারণগুলো এড়িয়ে এবং সচেতন থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যেহেতু লক্ষণগুলো ফ্লু’র মতোই সংক্রমিত হয়, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো।
নিয়মিত হাত ধোয়া খুবই জরুরী। সদ্য প্রকাশিত ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনাবলী অনুসারে সংক্রমণ ও জীবাণু ছড়িয়ে পড়া এবং অন্যান্য সংক্রমক রোগের বিস্তার রোধ করতে মাস্ক পরার চেয়েও হাত পরিস্কার রাখা বেশী স্বাস্থ্য কর এবং কঠোর হ্যান্ডওয়াশ অনুশীলন করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। যদি গর্ভাবস্থায় কেউ অসুস্থ বোধ করেন বা সমস্যা মনে করেন তবে সেদিকে নজর দিন। বাড়ীতে থাকা এবং প্রচুর বিশ্রাম নেয়া জরুরী। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার ও হালকা গরম পানীয় গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের পরিহিত কাপড় ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পরিবারের সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। এই সময় নিজের ইচ্ছায় ওষুধ না খাওয়াই ভালো। কারণ গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
করোনা আক্রান্ত মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা চাই। সেগুলো হলো-বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তাকে স্পর্শ করতে হবে। ব্রেস্ট পাম্প ও বোতল দরকার হলে সেগুলো ভালো করে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। দুধ খাওয়ানোর সময় যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে হাঁচি বা কাশি না দেওয়ার। সম্ভব হলে একটা মাস্ক পরে নিয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে হবে। সবচেয়ে ভালো উপায় করোনা আক্রান্ত মা যদি ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে দুধ বের করে দেন এবং অন্য কেউ যদি সেটা খাইয়ে দেয়। প্রতিবার খাওয়ানোর পর পাম্প ও বোতল ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে।
সরকার স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগণ যাতে ঘরে বসেই ডিজিটাল সেবা পায়-সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে। কর্মস্থলে বয়ষ্ক ও গর্ভবতী মহিলারা যাতে না আসেন সেই ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা সেবা দিতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সকল হাসপাতাল বদ্ধপরিকর। তাই করোনা আক্রান্ত হলে গর্ভবতী মা হাসপাতালে এসে নিঃসন্দেহে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
গর্ভবতী মায়েদের বাসায় থেকে নিয়মিত ফোন করে ডাক্তারকে অবগত করবেন এবং যথাসম্ভব বাসায় থাকার চেষ্টা করতে হবে। খুব বেশী সমস্যা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। আর এ জন্য চাই পরিবার থেকে শুরু করে দেশের সকলকে এই সংকটাপন্ন অবস্থায় জনগণের পাশে এসে দাঁড়ানো। তবেই আমরা এই করোনা যুদ্ধে সফল হবো ইনশাআল্লাহ্। -পিআইডি ফিচার।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved  2022 sahasisamoy
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!